প্রণতি জানাই:
এই যে আমার দু’চোখের ক্লান্তি মুছে ফেলে
সবুজ গাছপালা, ফসলের মাঠ,
নানা রঙের ফুল, কূল-ছাপিয়ে-ওঠা নদী,
গোধূলি-রঙিন পথ, পালতোলা
নাওয়ের এগিয়ে চলা হাওয়া-স্পন্দিত বাঁশপাতা,
সর্ষে ক্ষেতে গ্রামীণ কিশোরীর প্রজাপতি
ধরার জন্যে আভাময় ছোটাছুটি,
দিঘির ঘাটে তৃষ্ণার্ত পাখির জলপান,
কী করে ভুলব এদের বদান্যতা!
এই নিসর্গ, এই জীবনের স্পন্দন,
যে দেশে প্রস্ফুটিত, আমি সে দেশের অধিবাসী।
যে দেশে বইছে মেঘনা, পদ্মা,
সুরমা, কর্ণফুলি, যে দেশে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে
গারো পাহাড়, যে দেশে গাড়িয়াল ভাইয়ের কন্ঠে
মঞ্জরিত ভাওয়াইয়া, যে দেশের মাঝি জোৎস্নারাতে
গায় ভাটিয়ালি, যে দেশে ঝঙ্কৃত হয়েছে লালন ফকিরের একতারা,
বেজেছে হাসন রাজার ঢোল,
যে দেশের বাতাসে ভাসে রাধারমণের গান,
আমি সে দেশের মানুষ।
যে দেশে সূর্য সেন জন্ম নেন,
যে দেশে সালাম বরকত প্রাণ দেয় মাতৃভাষার জন্যে,
যে দেশে আসাদের শার্ট ভিজে যায় রক্তে,
যে দেশে নূর হোসেনের বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায় বুলেটে,
যে দেশে স্বাধীনতার সূর্যোদয়ে তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের ছোপ,
যে দেশের মুক্তিযোদ্ধা মুক্তির গান গেয়ে প্রবেশ করে
বাংলাদেশের হৃদয়ে আমি সে দেশের মানুষ।
আমার স্বদেশ যখন সন্ত্রাসী
এবং জঙ্গী মৌলবাদীদের হুঙ্কারে প্রকম্পিত,
যখন ফতোয়াবাজদের নিপীড়নে প্রাণ হারায় বাংলা-মায়ের দুহিতারা,
তখন ঘৃণায়, ক্ষোভে নিজেরই হাত কামড়াই,
এবং সাম্প্রদায়িকতা আর মৌলবাদের ফণা কচলে
দেওয়ার জন্যে যার কণ্ঠস্বর আগুনের
অক্ষরের মতো ঝলসে ওঠে, তাকে জানাই প্রণতি,
তার বয়স আঠারো হোক কিংবা আশি।